রাধাবিনোদ মন্দির
জয়দেব তীর্থ কেন্দুলি
অজয়ের তীরে পবিত্র বৈষ্ণব তীর্থ কেন্দুবিল্ব গ্রাম যেখানে প্রাচীন শৈলীর রাধাবিনোদ মন্দির যেন বীরভূমের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রেম বিতরনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভক্ত মহাজন কবি ও লক্ষণ সেনের পঞ্চরত্নের অন্যতম জয়দেব গোস্বামীর নাম। কথিত আছে গীতগোবিন্দ রচনা কালে "স্মর-গরল-খন্ডনং মম শিরাসি মন্ডনম" লিখে স্নানে গেলে স্বয়ং গোবিন্দ শ্লোকের পরের লাইন লিখে দিয়ে যান- "দেহি পদ্পল্লব মুদারম।" কেন্দুলীর মাটি ভক্ত বৈষ্ণবের কপালে যেন পরম আকাঙ্ক্ষিত রসকলি। ইতিহাস অনুযায়ী ১৬৮৩ সালে বর্ধমানের মহারানী ব্রজকিশোরী দেবী জয়দেবের জন্মভিটেতে এই রাধাবিনোদ মন্দির নির্মাণ করেন। জয়দেবের সঙ্গেই যে নাম একত্রে উচ্চারিত হয়। তিনি জয়দেব লীলা সহচরী পদ্মাবতী, যার নৃত্যের প্রসিদ্ধি সেই সময় সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
অজয় নদের পূর্ণস্নান
কুশেশ্বর শিব মন্দির
উৎসব ও মেলাঃ কেন্দুলী জয়দেব মেলা সারা ভারতের আউল-বাউল-ফকির- দরবেশ ও বৈষ্ণবের কাছে বাউল মেলা নামে পরিচিত। শেষ পৌষে মকর সংক্রান্তি তিথিতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলার প্রেক্ষাপটে আছে অপূর্ব লোকশ্রুতি। মকর সংক্রান্তিতে প্রতিবছর ভক্ত বৈষ্ণব জয়দেব যেতেন গঙ্গাস্নানে। এক বছর যেতে না পেরে গভীর বেদনার্ত হৃদয়ে পেলেন মকরবাহনা মা গঙ্গার স্বপ্নাদেশ- ভক্তের অবগাহন গ্রহণ করতে অজয় নদীর উজানে মা নিজেই আসবেন। সেই বিশ্বাসেই মকর সংক্রান্তিতে অজয়ের জলে স্নান ভারততীর্থের পবিত্রতম স্নানযাত্রা আর তাকে কেন্দ্র করে জয়দেব মেলা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাউল ও কীর্তনীয়ার মহামিলনকেন্দ্র।
কি কি দেখবেনঃ রাধাবিনোদ মন্দির ছাড়াও পার্শ্ববর্তী স্থানে সহজিয়া আখড়া পাবেন, তৈরি হচ্ছে বাউল একাদেমি। এখানেই আছে কুশেশ্বর শিব মন্দির, অদূরে শীর্শা শিব মন্দির। বোলপুর থেকে যাতায়াতের পথে পাবেন শাল-পিয়ালের ছায়ায় ঘেরা ইলামবাজারের জঙ্গল। এই জঙ্গলের আমখই গ্রামের ফসিল পার্ক অন্যতম দ্রষ্টব্য। ইলামবাজার থেকে অজয় পার হয়ে জঙ্গলের প্রকৃতি দেখতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় সবুজবন যাওয়া যেতে পারে, তার কাছেই আছে ইছাই ঘোষের দেউল, গড় জঙ্গল, প্রাচীন চন্ডীমাতা এবং দেউল পার্ক।
কেন্দুলী জয়দেব মেলা
কি ভাবে যাবেনঃ বোলপুর থেকে বাসে ইলামবাজার হয়ে জয়দেব কেন্দুলি যাওয়া যায়। আবার ইলামবাজার থেকে ছোট গাড়িতে জয়দেব মোড় হয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় কেন্দুলি।