রবিতীর্থ
বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র শান্তিনিকেতন বীরভূমের পর্যটন মানচিত্রের উজ্জ্বলতম নাম। ১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতনের কুড়ি বিঘা জমি মাত্র ৫ টাকায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রদান করেছিলেন রায়পুরের জমিদার ভুবন মোহন সিংহ। ১৮৯০-৯১ সালে ব্রহ্ম উপাসনা নিমিত্তে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করেন ব্রহ্ম মন্দির। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম নামে একটি বিদ্যালয়, ১৯২১ সালে যা হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণ ঘুরলে একে একে দেখবেন -
রবিঠাকুরের বাড়ি
শান্তিনিকেতন ভবন
ছাতিমতলা
যে ছাতিমতলাতে বসে দেবেন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি, সেই ছাতিমতলা ই আজ পুণ্য বেদি রূপে প্রতিষ্ঠিত। আজ আর সে ছাতিম গাছ নেই, কিন্তু থেকে গেছে ছাতিমতলার বেদি।
শান্তিনিকেতন ভবন
আশ্রমের সবচেয়ে পুরনো বাড়ি শান্তিনিকেতন ভবন। ১৮৬৪ সালে জোড়াসাঁকো বাড়ির আদলে দেবেন্দ্রনাথ এটি নির্মাণ করেন। মহর্ষি এবাড়িতে ব্রহ্ম উপাসনা করেছেন, রবীন্দ্রনাথের কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপনের সময় তিনি সপরিবারে বসবাস করেছেন।
ছাতিমতলা
কাঁচ মন্দির (উপাসনা গৃহ)
কাঁচ মন্দির (উপাসনা গৃহ)
দেবেন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত উপাসনা মন্দির আজ মন্দির নামে অধিক পরিচিত। ১৮৯২ সালে বুধবার এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে শুধু এখানেই নয় সমগ্র ব্রাহ্মসমাজে প্রতি বুধবার সকালে উপাসনা হয়ে আসছে।
খোয়াই ও সোনাঝুরি হাট
শ্যামবাটি ক্যানেল হয়ে শান্তিনিকেতন ফেরার পথে রুক্ষ লালমাটির বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো সোনাঝুরি ইউক্যালিপটাসের ছায়ায় বিকেলে বসে প্রাকৃতিক বিপণন কেন্দ্র সোনাঝুরির হাট। তার একটু আগে চোখে পড়বে প্রকৃতি ভবন। সোনাঝুড়ি হাটে গ্রামীণ হস্তশিল্পের নানান পসরা দেখার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে কোপাইয়ের ক্ষয়ে যাওয়া ভূমি প্রকৃতির অপরূপ শোভা যা খোয়াই নামে পরিচিত। বিকিকিনির কোলাহলের মধ্যে এই মাদলের তাল, বাঁশি দোতারার সুর আর উদাসী বাউলের কন্ঠ আপনাকে এক স্মরণীয় গোধূলি বেলা উপহার দেবে।
খোয়াই ও সোনাঝুরি হাট
আমার কুটির
আমার কুটির
বিপ্লবী সুষেন মুখার্জী প্রতিষ্ঠিত আমার কুটির বীরভূমের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। বহু বিপ্লবীর আশ্রয়স্থল ছিল এই আমার কুটির।স্বাধীনতার পরে মুখ্যত পান্নালাল দাশগুপ্তের উদ্যোগে গ্রামোন্নয়ন তথা আত্মোন্নয়নের ভাবনা নিয়ে গ্রামীণ কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে শুরু হয় কুটির শিল্প ও হস্ত শিল্প কেন্দ্র। চর্ম, বস্ত্র, ডোকরা, কাঠ প্রভৃতির তৈরি ও বিক্রির জায়গা এই আমার কুটির ক্রেতা তথা পর্যটকদের জন্য সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শান্তিনিকেতনের সব থেকে বড় উৎসব বসন্ত উৎসব। দোল কে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনে এই নতুন ধারার উৎসব প্রচলন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। দেশ-বিদেশ থেকে এ উৎসবে যোগদান করেন অসংখ্য মানুষ।
বসন্ত উৎসব
পৌষ মেলা
৭ই পৌষ শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্ম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯১ সালে। তারও আগে ১৮৪৩ সালে ৭ই পৌষ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ওই দিনের স্মরণে ১৮৯৪ সাল থেকে পৌষ মেলা হয়ে আসছে। শতাব্দী প্রাচীন এই ৩ দিনের মেলা বীরভূমের প্রাচীনতম মেলা বলা যায়।
কি ভাবে যাবেনঃ কলকাতা থেকে রামপুরহাটগামী যে কোন ট্রেনে বোলপুর স্টেশনে নেমে একটা টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথে। সরাসরি গাড়ি নিয়ে এলে কলকাতা থেকে বোলপুর ১৭০-১৮০ কিমি পথ। সে ক্ষেত্রে নিজেদের গাড়িতেই ঘোরা যেতে পারে দ্রষ্টব্য স্থানগুলি।